স্বপ্নীল : হাওরের মাঝে আলোর বাতিঘর

Date:

আমিনুল হক নজরুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট: অন্তরের আঁধারে আলোর প্রদীপ জ্বালাতে হলে বই একমাত্র সহায়ক। আর বইয়ের মহা আবাসস্থল হলো গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরী। তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সরকারী বা বেসরকারী গণগ্রন্থাগার। এসমস্ত গ্রন্থাগারে মানুষের হাজার বছরের লিখিত অলিখিত সব ইতিহাস নিরবে ঘুমিয়ে আছে ছোট ছোট একেকটি তাকে।

গ্রন্থাগার হল কালের খেয়াঘাট। যেখান থেকে মানুষ সময়ের পাতায় ভ্রমন করে। প্রাচীন শিলালিপি থেকে আধুনিক লিপির গ্রান্থিক স্থান হলো এককটি গ্রন্থাগার বা লা¦ইব্রেরী। একটি গ্রন্থাগার মানবজীবনকে যেমন পালটে দেয় তেমনি আত্মার খোরাকও যোগায়। তাই গ্রন্থাগারকে বলা হয় শ্রেষ্ঠ আত্মীয়। যার সঙ্গে সবসময় ভালো সম্পর্ক থাকে। জ্ঞানচর্চা ও বিকাশের ক্ষেত্রে এসব গ্রন্থাগারের ভূমিকা অনন্য। গ্রন্থাগারকে তুলনা করা হয় জ্ঞানের মহাসমুদ্রের সঙ্গে। অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের মাঝে সেতু বন্ধন তৈরী করে এই গ্রন্থাগার।

আর তাই বিশ্বের এই করোনাক্লান্তি কালেও কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ভাটিররানী বলে খ্যাত অষ্টগ্রামের কাস্তুল বাজারে প্রতিষ্ঠিত ”স্বপ্নীল গণগ্রন্থাগার” ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড়হাজার বই নিয়ে আঁধারের বুকে আলো দিয়ে যাচ্ছে। এ গ্রন্থাগারের রয়েছে একটি নিজস্ব প্রকাশনা বিভাগ। এখান থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা সাতটি। এখানে কর্মরত রয়েছেন একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লাইব্রেরীয়ান ও একজন অফিস সহায়ক।

এ গ্রন্থাগারটি ২০২০ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও জেলা সরকারী গণগ্রন্থাগার কর্তৃক জেলার শ্রেষ্ঠ বেসরকারী গণগ্রন্থাগার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। এই গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে তরজমাসহ পবিত্র কোরআন-হাদিস, ইতিহাস ঐতিহ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, ভ’গোল, ভ্রমন, জীবনীগ্রন্থ, আইন, চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রভৃতি। এখানে সাতটি জাতীয় দৈনিক ও দুইটি সাপ্তাহিক পত্রিকাসহ তিনটি সাহিত্য ও কৃষি বিষয়ক ম্যাগাজিন নিয়মিত রাখা হয়। এ গ্রন্থাগারটি সপ্তাহে শনি থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত থাকে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ২৫/৩০ জন পাঠক পাঠিকা নিয়মিত বই পাঠে জ্ঞানের আলো নিতে আসে।

গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক নজরুল ইসলাম সাগর জানান, গ্রন্থাগারটি সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি ভর্তূকি ও সমাজসেবা মূলক প্রতিষ্ঠান। সরকারী অনুদান যা আসে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তারপরেও গ্রন্থাগারটিকে আধুনিকায়ন করার চেষ্ঠা চলছে। অচিরেই গ্রন্থাগারটিতে ”বঙ্গবন্ধু কর্ণার” স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। যা শীঘ্রই বাস্তবায়ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সরকারী গণগ্রন্থাগারের সহকারী পরিচালক (লাইব্রেরীয়ান) আজিজুল হক সুমন মুঠোফোনে জানান, ”স্বপ্নীল” হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের সর্ববৃহৎ গণগ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারটি হাওরবাসীর মেধা ও মননের বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে। জ্ঞান বিতরণ, জনসচেতনতা তৈরী, প্রকাশনা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজনসহ নানাবিধ ইতিচক কাজের মাধ্যমে হাওর অঞ্চলে আলোর বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে গ্রন্থাগারটি। সত্যিই, এ পাঠাগারটি দূর্গম হাওরে যেভাবে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে বই ও আত্মার সেতুবন্ধন তৈরী করে যাচ্ছে, সে বিবেচনায় স্বপ্নীল গণগ্রন্থাগারকে হাওরের বাতিঘর বলা যেতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে ফের বন্দুক হামলা, নিহত ৪

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার একটি হাইস্কুলে আবারও বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত চারজন...

শেখ হাসিনাকে ভারতে চুপ থাকতে হবে: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একহাত নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা...

ইসলামী ব্যাংকের ঋণের অর্ধেকের বেশি টাকা নিয়েছে এস আলম

দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণের...

বেক্সিমকো গ্রুপের সম্পদ দেখভালে রিসিভার নিয়োগের নির্দেশ হাইকোর্টের

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান...