বিনোদন ডেস্ক: হাসপাতালে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর চলে গেলেন দুই বাংলার কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। রবিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ৮৬ বছর বয়সে শেষ হলো সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় জীবনের বৈচিত্র্যময় পথচলার।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ৬ অক্টোবর কলকার বেলভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
কিন্তু ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় ৮৫ বছর বয়সী এই তারকার অবস্থার আরও অবনতি হয়। করোনার পাশাপাশি অভিনেতার প্রস্টেট ক্যানসার নতুন করে ছড়িয়েছে তার ফুসফুস এবং মস্তিষ্কে। মূত্রথলিতেও সংক্রমণ ঘটে। এরপর প্লাজমা থেরাপি, শ্বাসনালিতে অস্ত্রপচার-সহ নানা ভাবে অভিনেতাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে ৩০ সেপ্টেম্বর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তার নিজের বায়োপিকের শুটিংয়ের জন্য গিয়েছিলেন টালিগঞ্জের ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওতে। সেখানেই তিনি অসুস্থ বোধ করেন।
জানা গেছে- ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওতে সে দিন লাঞ্চ ব্রেকের পর সৌমিত্রর ইন্টারভিউ নেন পাঁচ জন। তাদের মধ্যে ছিলেন- সন্দীপ রায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী ও পরিচালক অতনু ঘোষ। বাকি দু’জন সাংবাদিক।
১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি কলকাতার মির্জাপুরে জন্মগ্রহণ করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজে সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।
১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’-এর মধ্য দিয়ে অভিনয় জগতে পা রাখেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এরপর তিনি সত্যজিৎ রায়ের ৩৪টি সিনেমার ভিতর ১৪টিতে অভিনয় করেছেন। পরবর্তীতে তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মত জনপ্রিয় পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘দেবী’, ‘স্বরলিপি’, ‘সমাপ্তি তিনকন্যা’, ‘আগুন’, ‘বেনারসি’, ‘অভিযান’, ‘শেষ প্রহর’, ‘চারুলতা’, ‘বাক্স বদল’, ‘কাপুরুষ’, ‘কাচ কাটা হীরে’, ‘বেলাশেষে’, ‘প্রাক্তন’ উল্লেখযোগ্য।
শুধু সিনেমা নয়, অসংখ্য নাটক, যাত্রা এবং টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। অভিনয় ছাড়া তিনি নাটক ও কবিতা লিখেছেন। করেছেন পরিচালনার কাজটিও।
ভারত সরকার কর্তৃক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ২০০৪ সালে ‘পদ্ম ভূষণ’ ও ২০১২ সালে ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ লাভ করেন। এছাড়া ২০১৭ সালে তিনি ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ‘লিজিওন অফ অনার’ লাভ করেন। একই বছর পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক ‘বঙ্গবিভূষণ’ পুরস্কার অর্জন করেন। যদিও ২০১৩ সালে তিনি একই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।