নজরুল ইসলাম সাগর: কিশোরঞ্জেরে হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের সাভিয়ানগর ডিজিটাল পোস্ট অফিসে রানার পদে কর্মরত গোলাম হোসেন (৫০)। দীর্ঘ ২৫ বছর আগে যখন তিনি টগবগে যুবক তখন মনে অনেক স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সাভিয়ানগর ডিজিটাল পোস্ট অফিসে রানার পদে মাত্র চারশত টাকা বেতনে চাকুরীতে যোগদান করেছিলেন। ২৫ বছর পর তার বেতন এসে দাড়িয়েছে ৪১০০টাকায়। পাচ্ছেননা কোন ঈদ বোনাস।
এই দুর্মূল্যের বাজারে সামান্য বেতনে যেখানে তার বৃহৎ পরিবারের দু’বেলা আহার জুটেনা, সেখানে ঈদের আনন্দ তার কাছে যেন দূঃস্বপ্ন হয়ে দাড়িয়েছে। যিনি সারা জীবন নিজের কাঁেধ ডাকের ঝুলিতে অন্যের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার খবর বয়ে বেড়ালেন আজ তার কষ্টের কথা শুনার যেন কেউ নেই।
তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় একটি জীর্ণ কুঠিরে সাত সদস্যের বৃহৎ পরিবার নিয়ে অতি কষ্টে জীবন যাপন করছেন তিনি। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক তিনি। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে দুটি বেকার হলেও বড় ছেলে বিয়ে করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পিতার উপরই নির্ভরশীল। ছোট মেয়েটি স্থানীয় হক সাহেব উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী।
এবারের ঈদে অন্য সবার মত তার মেয়েরও বায়না ছিল নতুন এক সেট জামার। কিন্তু মেয়ের সে সামান্য দাবীটুকুও পুরন করতে পারেননি গোলাম হোসেন। এ বিষয়ে গোলাম হোসেনের সাথে কথা হলে অশ্রæসিক্ত চোখে তিনি বলেন, সামান্য বেতনে যেখানে পরিবারের সবার মুখে দ’ুবেলা খাবার জুটাতে পারিনা সেখানে মেয়ের ঈদের জামা কিনে দেবার টাকা পাব কই?
সাভিয়নগর ডিজিটাল পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার, পোস্টম্যান ও রানারের সাথে কথা হলে তারা জানান, ডাক বিভাগে যে কাজ করে বিভাগীয় কর্মচারীগণ সরকারী সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন, আমরা অবিভাগীয় ডাক কর্মচারীগণ একই কাজ করে সামান্য সম্মানী ভাতা পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমাদের কোন ঈদ বোনাসও দেওয়া হচ্ছেনা। যা সম্পূর্ণ অমানবিক। তারা বলেন, স্বাধীনতার পর প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর ভাগ্য ফিরলেও, ভাগ্য ফিরেনি নাম মাত্র বেতনে কর্মরত অবিভাগীয় ডাক কর্মচারীদের। তারা অবিলম্বে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ২৪ হাজার অবিভাগীয় ডাক কর্মচারীর চাকুরী জাতীয় করণসহ ঈদ বোনাস প্রদানের দাবী জানান।