তোফায়েল আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট: কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে নিহত আসাদ মিয়ার ছোট ভাই দ্বীন ইসলামের (৩৮) লোমহর্ষক বর্ণনা।সে একাই খুন করেছে বড় ভাই আসাদ মিয়া (৫৫), তার স্ত্রী পারভীন আক্তার (৪৫) ও তাদের শিশুপুত্র লিয়ন (১২) কে।হত্যার পর একাই তিনজনের লাশ দিয়েছে বলে জানায় সে।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ সূত্রে জানা যায়, দ্বীন ইসলামের সাথে নিহত আসাদ মিয়ার জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল দীর্ঘদিন থেকে। বিরোধের জেরেই বুধবার (২৮ অক্টোবর) রাত আনুমানিক দেড়টা থেকে ২টার দিকে দ্বীন ইসলাম নিহত আসাদের ঘরে প্রবেশ করে। পরে লোহার শাবল দিয়ে ঘুমন্ত আসাদ মিয়া, তার স্ত্রী পারভীন ও শিশুসন্তান লিয়নের মাথায় আঘাত করে তাদেরকে হত্যা করে।পরে লাশ গুম করার জন্য ঘরের পাশে বাঁশঝারের নিচে তিনটি লাশ টেনে নিয়ে গর্ত করে মাটিচাপা দেয়।
ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে নিহত আসাদ মিয়ার মেজো ছেলে মোফাজ্জল নানার বাড়ি থেকে ফিরে মা, বাবা ও ছোট ভাইকে না পেয়ে তাদের খুঁজতে থাকে। সারাদিন খোঁজাখুজি করে তাদের কোন সন্ধান পায়নি মোফাজ্জল। একপর্যায়ে ঘরের ভিতরে রক্ত দেখতে পেয়ে তার সন্দেহ হয়।
নিহতদের নিখোঁজের ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যায় স্থানীয় লোকজন ঘরের পিছনে নতুন মাটি খুঁড়া দেখে সন্দেহের জেরে কোদাল দিয়ে মাটি উল্টাতেই নিহত শিশু লিয়নের হাত বেরিয়ে আসে। পরে স্থানীয়রা তৎক্ষনাৎ কটিয়াদী থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যার আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
অপরদিকে ঘটনার পর থেকেই নিহতের ছোট ভাই দ্বীন ইসলামকে বাড়িতে না পাওয়ায় পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পার্শ্ববর্তী এলাকা মুমুরদিয়া বাজারের একটি চা স্টল থেকে দ্বীন ইসলামকে আটক করে পুলিশ। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দ্বীন ইসলামসহ আরো তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
কটিয়াদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম,এ, জলিল জানান, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দ্বীন ইসলাম এই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানায়। জমি সংক্রান্ত নিয়ে বিরোধের জের ধরেই দ্বীন ইসলাম ভাই, ভাবি ও ভাতিজাকে হত্যা করেছে বলে জানায় সে। এ ঘটনায় আটক অপর তিনজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম(বার), হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
উল্লেখ্য এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের জামষাইট গ্রামে মাটিচাপা দেয়া তিনজনের লাশ উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে পুলিশ। রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাটি খুঁড়ে আসাদ মিয়া, তার স্ত্রী পারভীন আক্তার ও তাদের শিশুপুত্র লিয়ন এর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত আসাদ মিয়া জামষাইট গ্রামের মৃত মীর হোসেনের ছেলে।