সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট: কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে গণধর্ষণের শিকার হয়ে স্কুল ছাত্রী অন্ত:সত্ত্বার ঘটনায় জড়িত মূল আসামী মনছুর মিয়া (৫৫) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধর্ষক মনছুর মিয়া উপজেলার কাস্তুল ইউনিয়নের মসজিদজাম সোনারু হাটি গ্রামের মৃত আফিল উদ্দিনের ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) ভোরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অষ্টগ্রাম থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আরিফুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর প্রথম গেইট এলাকা থেকে মনছুরকে গ্রেপ্তার করে।
চলতি বছরের গত ২৫ জুন গণধর্ষণের ঘটনায় স্কুল ছাত্রীর মা বাদী হয়ে মনছুর মিয়া (৫৫) ও শেখ নজরুল ইসলাম (৪৫) এই দুইজনের বিরুদ্ধে অষ্টগ্রাম থানায় মামলা (নং-৯) দায়ের করেন। মামলা দায়েরের আগে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং স্কুল চাত্রীর পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। বিষয়টির কোনো সুরাহা না করতে পেরে ধর্ষনের ঘটনায় জড়িত ২ আসামী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
ঘটনার প্রায় সাড়ে তিন মাস পর ২ আসামীর মধ্যে মামলার প্রধান আসামি মনছুর মিয়াকে মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) গ্রেপ্তার করা হয়। তবে র্ধষনের ঘটনায় জড়িত অপর আসামি শেখ নজরুল ইসলাম এখনো পলাতক। নজরুল একই ইউনিয়নের শেখের হাটি গ্রামের মৃত শেখ মঈন উদ্দিনের ছেলে।
অন্ত:সত্ত্বা স্কুল ছাত্রী, পরিবারের সাথে সরেজমিনে কথা বললে তারা জানায়, কিশোরী স্থানীয় অষ্টগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত ১৬ জানুয়ারি রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে পাশের বাড়ির মুনছুর মিয়া ও শেখ নজরুল ইসলাম কিশোরীর ঘরে ঢুকে দড়ি দিয়ে মেয়েটিকে বেঁধে ফেলে। প্রথমে মুনছুর ও পরে নজরুল হত্যার হুমকি দিয়ে মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। মেয়েটির চিৎকারে পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী টের পেয়ে গেলে দুই ধর্ষক দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। গণধর্ষণের শিকার হয়ে এই ছাত্রী এখন প্রায় নয় মাসের অন্ত:সত্ত্বা।
ছাত্রীর মায়ের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। দারিদ্রতার কারণে জীবিকার তাগিদে মেয়েকে গ্রামের বাড়িতে রেখে তিনি ঢাকায় গিয়ে গুলশান এলাকার একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করেন। ছুটিতে মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসেন। মেয়েটি বাড়িতে একা থেকে স্কুলে লেখাপড়া করে। এ সুযোগে প্রতিবেশী মনছুর তার সহযোগী নজরুলকে নিয়ে তার মেয়ের উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।
সুবিচারের আশায় তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি অবহিত করলে কোনো সুরাহা করতে পারেননি তারা। বিষয়টি মীমাংসা না করে বরং উল্টো ছাত্রী ও তার পরিবারের উপর নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করে দুই ধর্ষকের পরিবার ও স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অষ্টগ্রাম থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আরিফুর রহমান বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে পুলিশ আসামিদের ধরতে তৎপরতা শুরু করে। কিন্তু দুই আসামিই অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির হওয়ায় তারা কৌশলে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করে আসছিল। অবশেষে মূল অভিযুক্ত মুনছুর মিয়ার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর প্রথম গেইট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। এ ব্যাপারে পরবর্তি আইনী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া অপর আসামি নজরুলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পারবো।