ভিশন ডেস্ক: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে বিলম্ব না করে দ্রুত সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য এনআইডি অনুবিভাগকে বলা হয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোন সমস্যা দেখা দিলে কমিশনের অনুমোদনের জন্য পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। সম্প্রতি ইসি সচিবালয়ের অক্টোবর ২০২০ মাসের সমন্বয় সভায় এসব নির্দেশনা দেন ইসির সিনিয়র সচিব মো: আলমগীর।
সভার শুরুতেই সভাপতির বক্তৃতায় ইসি সচিব উল্লেখ করেন- নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে থাকে। তবে, এর পাশাপাশি আইনের মাধ্যমে দেশের প্রায় ১১ কোটি ভোটারের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের দায়িত্বও পালন করে থাকে। যেহেতু, বিপুল সংখ্যক ভোটারের জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত নানাবিধ কার্যক্রম করতে হয়, তাই এই সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যক্রমের উপর কমিশনের সুনাম-দুর্নাম জড়িত। সে প্রেক্ষাপটে, বিশেষকরে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন সংক্রান্ত কার্যক্রমে সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষেত্রে কোন ভাবেই বিলম্ব কাম্য নয়। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন কার্যক্রমটি কোয়াসি জুডিশিয়াল হওয়ায় এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিচারিক দক্ষতা ও বিচক্ষণতার ও প্রকাশ ঘটাতে হবে, যাতে কমিশনের সুনাম অক্ষুণ্ন থাকে।
সভায় যুগ্মসচিব (প্রশা: ও অর্থ) জানান, যে সকল শাখা/ ইউনিট বিগত মাসের নিষ্পন্ন ও অনিষ্পন্ন কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাখিল করেননি তাদেরকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন প্রেরণের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেন। এছাড়াও, কোন শাখা-ইউনিট ও দপ্তরের অনিষ্পন্ন কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিষ্পন্ন করার বিষয়েও জোর দেওয়া হয়।
সভায় জানানো হয়, বিভিন্ন স্থানে তদন্তে গিয়ে দেখা গেছে- ভোটার নিবন্ধন ফরম-২ এ ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের স্বাক্ষর ও এনআইডি নম্বরের ব্যবহার নেই এবং সনাক্তকারী বা যাচাইকারীদের স্বাক্ষর থাকে না। এছাড়া, বয়স্ক ভোটারদের ক্ষেত্রে সরেজমিনে যাচাই করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি অত্যন্ত যৌক্তিক বলে মতামত আসে।
একজন যুগ্ম সচিব জানান, অনেক ক্ষেত্রেই এই সকল বিষয়ের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। এ বিষয়ে এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় যে সমস্যা তৈরি হয়েছে সেখানে এ বিষয়গুলোর সম্পৃক্ততা রয়েছে। এনআইডি অনুবিভাগ প্রায় ১১ কোটি জনবলকে সেবা প্রদানের ব্রত নিয়ে কাজ করছে এবং ১৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে সেবা প্রদানে সহায়তা করছে। মাত্র কয়েকজন অসর্তক কর্মকর্তার কারণে কমিশনসহ সকলকে বিব্রত হতে হচ্ছে এবং সকলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে অতএব, এ বিষয়ে সকলকে আরও সর্তক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়, ভোটার নিবন্ধন ফরম-২ এ তথ্য সংগ্রহকারী, সুপারভাইজার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, সনাক্তকারী ও যাচাইকারীর নাম, স্বাক্ষর ও এনআইডি নম্বর সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আর সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে সংশ্লিষ্ট সকলকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অন্যথায় এর ব্যত্যয় ঘটতে বা গাফলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দ্রুত এনআইডি সংশোধনের নির্দেশনা: সভায় সভাপতির বক্তব্যে ইসির সিনিয়র সচিব বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যাবলী অপরিবর্তনীয় মর্মে ধরেই সকলকে কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এনআইডি সংশোধনের ক্ষেত্রে কোন প্রমাণক যদি এনআইডি প্রস্তুতের পরে তৈরি হয় তাহলে শুধু সেটার ভিত্তিতে এনআইডি সংশোধন করা যাবে না। তবে বিশেষ প্রয়োজনে এনআইডি প্রস্তুতের সময়ে যদি দাপ্তরিক কারণে কোন ভুল হয় সেটা আইন, বিধি ও উপযুক্ত প্রমাণকের ভিত্তিতে সংশোধন করা যেতে পারে। এ বিষয়ে মহাপরিচালক, এনআইডি অনুবিভাগ উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কমিটির সভাপতির অনুমোদন গ্রহণ করে কমিশনের অনুমোদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, এনআইডি সংশোধনের ক্ষেত্রে বিলম্ব না করে দ্রুত সিদ্ধান্ত প্রদান করতে হবে। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোন সমস্যা অনুভূত হলে তা পরবর্তী ক্যাটাগরিতে প্রেরণ করতে হবে। এছাড়া প্রয়োজনে কমিশনের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করতে হবে। বোর্ডের সনদকে ভিত্তি ধরেই সংশোধন কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
এসময় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, কিছু কিছু সংশোধনের ক্ষেত্রে বেশ কয়েক বছর প্রায় ৮ থেকে ৯ বছরের ব্যবধান পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি এবং স্নাতক তিনটি সাটিফিকেটই আবেদনে দাখিল করা হয়েছে। “গ” ক্যাটাগরির এ আবেদনগুলি নিষ্পত্তি করতে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। রোহিঙ্গা অধুষিত চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩২টি বিশেষ এলাকায় ইতোমধ্যে ২২টি এলাকার কমিটির সাথে বৈঠক হয়েছে। রোহিঙ্গাদের সনাক্ত করাসহ ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া রোধ করা সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি প্রস্তাবনা তৈরি করবেন, যা পরবর্তীতে কমিশন সচিবালয়ে পাঠাবেন। এ প্রেক্ষাপটে এনআইডি অনুবিভাগ মহাপরিচালক জানান, আগামী পহেলা নভেম্বর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা (জুম মিটিং) অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকেই সমন্বিত আলোচনার মাধ্যমে নির্দেশনা প্রদান করা হবে।
তবে এ ধরনের সংশোধনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রথমত বোর্ডের এসএসসি সনদ অনুযায়ী বয়স সংশোধন করতে হবে। দ্বিতীয় শিক্ষাগত সনদ না থাকলে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন ভাইবোনের এনআইডি কপি এবং আইন, বিধি ও নীতিমালার আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তৃতীয় আইন, বিধি এবং নীতিমালা অনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা অনুভূত হতে ক্যাটাগরি পরিবর্তন করতে হবে।
এসব বিষয়ে ইসির যুগ্ম সচিব ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. আবদুল বাতেন বলেন, “কয়েকদিন আগে এনআইডির বিষয়ে একটি মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। সেখানে স্যার (ইসি সচিব) বলেছেন, এনআইডি সংশোধনের বিষয়গুলো দ্রুত নিষ্পত্তি তো করতেই হবে, পাশাপাশি যেন আইনগত বিষয়গুলো কঠোরভাবে দেখা করা হয়। ধরেন ডাটাবেজে কারো শিক্ষাগত সার্টিফিকেট আছে, কিন্তু সার্টিফিকেট ছাড়াই সে কারেকশন করতে চায়; সেটার বিষয়ে বলা হয়েছে সার্টিফিকেট দিলেই কারেকশন হবে, নইলে করা যাবে না। আবার যাদের সার্টিফিকেট নেই তাদের হয়ত ভোটার ফরম-২ এ ভোটার হওয়ার সময় যে তথ্য দিয়েছিলো সেই তথ্যগুলো অনুযায়ী কারেকশন করতে হবে। এবং কাগজপত্র ভেরিফাই করতে হবে। আরেকটি বিষয়েও আলোচনা হয়েছে যে, ধরেন কেউ আগে ভোটার হয়েছে একটি জন্মসনদ দিয়ে, এখন আরেকটি জন্মসনদ দিয়ে সংশোধন করতে চাইলে যদি তার প্রমাণ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এনআইডি সংশোধনে কঠোর নির্দেশনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এনআইডি সংশোধনে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। আর বলা হয়েছে পাসপোর্ট দিয়ে এনআইডি কারেকশন হবে না। কারণ পাসপোর্ট বর্ডার ক্রস করার জন্য ডকুমেন্ট মাত্র। আর এনআইডি হচ্ছে নাগরিকের পরিচয়পত্র। যদি পাসপোর্ট ভোটার হওয়ার আগে হয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি দেখা যেতে পারে। পেপার প্রোপার কিনা সেটাও দেখতে হবে। আর কেউ যেন এনআইডি নিয়ে দুর্নীতি বা অনিয়মে না জড়ায় সে বিষয়ে কঠোর বার্তাও দেওয়া হয়েছে।” সূত্র: বার্তা ২৪