বিশেষ প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের অসহায় প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ শওকত মিয়া (৬৩) বিনা চিকিৎসায় অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তিনি উপজেলার কাস্তুল ইউনিয়নের শান্তিনগর গ্রামের বাসিন্দা।
জানা যায়, দিন মজুরী করে সুখেই কাটছিল নিঃসন্তান দম্পতি শওকত-আম্বিয়ার সংসার। নিজের বাড়ি নেই, সন্তান নেই কিন্তু অভাব ছিলনা সংসারে। বিগত পনের বছর আগে অজানা এক রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাভাবিক চলাফেরাসহ কাজকর্ম করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তিনি। হাত পাসহ সারা শরীর অনবরত কাঁপতে থাকে। নিজের হাতে কোন খাবার এমনকি পানি পর্যন্ত পান করতে পারেননা। স্পষ্ট করে কোন কথাও বলতে পারেননা।
তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অন্যের বাড়িতে জীর্ণ ছোট একটি ঘরে পচন্ড শীতে বিনা চিকিৎসায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি। অন্যের সহযোগিতা ছাড়া দিনের প্রয়োজনীয় কাজও সারতে পারেননা তিনি। নিজে চলতে গেলেই ঘটছে দূর্ঘটনা। পড়ে গিয়ে সারা শরীরে রয়েছে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। তার স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন এ প্রতিনিধিকে জানান, স্বামী অসুস্থ্য হওয়ার পর থেকে অন্যের বাড়িতে কাজ করে দু’বেলা খাবারও যোগার করতে পারছিনা, তার চিকিৎসা করাব কি করে! স্বামীর প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আমরা এ পর্যন্ত সরকারী কোন সহযোগীতা পাইনি। এই শীতে অসুস্থ্য স্বামীকে নিয়ে খুবই কষ্টে দিন যাপন করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মহিবুল্লাহ্ হক লালন বলেন, তিনি আমাদের প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন, চিকিৎসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেলে তার ঔষধ ক্রয়ের প্রয়েজনীয় খরচও আমরা বহন করব।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ বুলবুল আহমেদের সাথে কথা হলে তিনি তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে ছুটে আসেন অসহায় শওকতের বাড়িতে। তিনি ডাঃ নূর-ই-আযমকে নিয়ে দীর্ঘ সময় পর্যবেক্ষণ করে বলেন, তিনি (শওকত) হানটিংটন্স কোরিয়া রোগে আক্রান্ত। প্রতি লাখে এমন রোগী মাত্র একজন দেখতে পাওয়া যায়। বংশগত ও জীন জাতীয় সমস্যায় এ রোগ হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাত পা ও শরীরের অস্বাভাবিক নড়াচড়া এর প্রধান লক্ষণ।
এ রোগে স্মরণশক্তি ও চলাফেরার ক্ষমতা দিনদিন হ্রাস পায়। এর স্থায়ী কোন সমাধান নেই। তবে তার সিটিস্ক্যান ও এমআরআইসহ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। তিনি কিছু ঔষধ লিখে তার এক মাসের ফ্রি ঔষধের ব্যবস্থা করে দেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল আলম বলেন, আমি শীঘ্রই তার বাড়িতে যাব, তাকে দেখার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।