ভিশন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ইমেইলে নিজের স্বাক্ষরিত পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছে ড. মুরাদ। ব্যক্তিগত কারণে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চান বলে পদত্যাগপত্রে জানিয়েছেন তিনি।
দায়িত্ব পাওয়ার পর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডা. মুরাদের চটুল বক্তব্যে নেতাকর্মীরা বিরক্ত হলেও এতোদিন আলোচনায় ছিলেন না সদ্য পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া এই প্রতিমন্ত্রী।
সবশেষ রাষ্ট্রধর্ম ও ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়া নিয়ে বক্তব্য দিয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন তথ্য ও সম্প্রচার ডা. মুরাদ হাসান। গত অক্টোবরে প্রথম রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরোধিতা করে আলোচনায় আসেন মুরাদ হাসান। সেসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোনো ধর্ম ব্যবসায়ী, মৌলবাদীদের আস্তানা হতে পারে না। যে কোনো মূল্যে ’৭২ এর সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে।
এর আগে সদ্য বরখাস্ত হওয়া গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীরের ২২ লাখ টাকা মূল্যের অবৈধ মোটরসাইকেলে হেলমেট ছাড়া ঘুরে সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন তিনি।
সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান ও নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি।
প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে হাস্যরস করতে করতে নারীদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন তিনি। এসময় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করতে দেখা যায় তাকে।
এরপর নারীবাদী সংগঠন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে এমপি মুরাদের শাস্তির দাবি ওঠে। কয়েকটি নারী সংগঠন বিবৃতিও দিয়েছে এ বিষয়ে। এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল থেকে।
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) একটি টিভি টকশোতে উপস্থিত বিএনপির একজন সাবেক নারী এমপিকে ‘মানসিক রোগী’ বলে অভিহিত করে তার সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান তিনি।
সোমবার (৬ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিত্র নায়ক মামনুন হাসান ইমন ও নায়িকা মাহিয়া মাহি একটি ফোনালাপ ভাইরাল হয়। যেখানে তিনি মাহিয়া মাহির সাথে অশ্লীলভাবে কথা বলেন এবং তাকে নিজের কাছে আসতে বলেন। ওই কথোপকথনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মাহিকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সহায়তায় তুলে আনার হুমকি দেন। পুরো বক্তব্যে ‘অশ্রাব্য’ কিছু শব্দ উচ্চারিত হয়। বিষয়টি দেশজুড়ে সমালোচনার জন্ম দেয়।
ভাইরাল সেই অডিওর সত্যতা নিশ্চিত করেন চিত্রনায়ক ইমন। তিনি বলেন, ‘যা শুনেছেন তাই। এটি আসলে বছরখানেক আগের ঘটনা। একটি সিনেমার মহরত অনুষ্ঠানের আগের রাতে প্রতিমন্ত্রী আমাকে ফোন করেছিলেন। বাকিটা তো আপনারা শুনেছেনই।’
এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া এবং শামসুন নাহার হলের ছাত্রলীগ নেত্রীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেও আলোচনায় আসেন এ প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তারা শিষ্টাচারের সংজ্ঞাটা আমাদের শেখাতে চাচ্ছে। তসলিমা নাসরিনের মতো অনেক তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশে আছে, দুঃখ লাগে কোনটা জানেন? এরা আবার জয় বাংলার কথা বলে। এরা ছাত্রলীগ করছে নাকি, এরা আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, এরা নাকি আবার নেত্রী ছিল কোনো কোনো হলে। কিন্তু রাতের বেলা এরা নিজেদের হলে থাকতেন না, ঘুমাতেন হোটেলে হোটেলে। কারণ ফাইভ স্টার হোটেলে থাকার মজা, আর রোকেয়া হল ও শামসুন নাহার হলে থাকাটা কি এক কথা? আমি এর চেয়ে বেশি বললে মিছিল শুরু হয়ে যেতে পারে। আমি আর বেশি কিছু বলব না।’
মুরাদ হাসান পেশায় চিকিৎসক ও আওয়ামী লীগপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে প্রথমে মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ২০১৯ সালের মে মাসে স্বাস্থ্য থেকে তাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ড. মুরাদ ১০ অক্টোবর ১৯৭৪ সালে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলাধীন দৌলতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মতিয়র রহমান তালুকদার, মাতা মনোয়ারা বেগম।
জামালপুর শহরস্থ কিশলয় আদর্শ বিদ্যা নিকেতনে তার প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু। ১৯৯০ সালে তিনি জামালপুর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৯৩ সালে নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০০০ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ২০০৪-২০০৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ‘প্লাস্টিক ও পুনর্গঠনমূলক সার্জারি’র উপর স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেলে ২০১১ সালে বিকিরণ ক্যান্সারবিজ্ঞানের উপর এম. ফিল ডিগ্রী অর্জন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যান্সারবিজ্ঞান বিভাগে কনসালটেন্ট (পরামর্শক) হিসেবে কর্মরত আছেন।
তার বাবা এ্যাডভোকেট মতিয়র রহমান তালুকদার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী বিচারপতি এবং জেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ছিলেন। সূত্র: ৭১ টিভি