তোফায়েল আহমেদঃ কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের কাস্তুল ইউনিয়নে নির্মাণের ২০ দিনের মাথায় ভেঙ্গে পড়েছে পানি নিষ্কাশন ড্রেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।
মঙ্গলবার (৮ জুন) সকালে অষ্টগ্রাম উপজেলার কাস্তুল ইউনিয়নের মসজিদজাম এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে। গত এক মাস পূর্বে ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শেখ জমির উদ্দিন এই ড্রেনটির নির্মাণ কাজ করেন।
লোকাল গর্ভন্যান্স সাপোর্ট (এলজিএসপির-৩) প্রকল্পের ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে কাস্তুল ইউনিয়নের মসজিদজাম এলাকার রিমন মিয়ার বাড়ি হতে বিশ্ব মাস্টারের বাড়ি পর্যন্ত নির্মিত ৪১ মিটার দৈর্ঘ্যের পানি নিষ্কাশন ড্রেনের নির্মাণ ব্যয় ৩ লক্ষ ৮ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, রবিবার (৬ জুন) ভোরে ৪১ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ড্রেনটির প্রায় ৩০ ফুট পর্যন্ত ভেঙ্গে পড়ে। নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই ড্রেনটি ভেঙ্গে পড়েছে। এত নিম্নমানের কাজ আমাদের আশাহত করেছে। অত্র এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য এই ড্রেনটিই একমাত্র ভরসা বলে জানান এলাকাবাসী। নির্মাণের অল্প সময়ের মধ্যে ড্রেনটি ভেঙ্গে পড়ায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলজিএসপি প্রকল্পের প্রকৌশলী ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের উদাসীনতাকে দায়ী করে এলাকাবাসীরা জানান, ড্রেনটি নির্মাণ করতে যে ব্যয় ধরা হয়েছে তাতে কাজ এতো নিম্নমানের হওয়ার কথা নয়। প্রকৌশলী ও ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য শেখ জমির উদ্দিনের যোগসাজসে নাম মাত্র কয়েক হাজার টাকায় নিম্নমানের ইট, সিমেন্ট দিয়ে নির্মাণ কাজ শেষ করেছেন বলে স্থানীয়রা জানান।
গত রবিবার (৬ জুন) এ ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে এলাকাবাসীকে আশ্বাস প্রদান করেন।
প্রকল্পের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য শেখ জমির উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে ড্রেনটি ভেঙ্গে পড়েছে। ড্রেনটিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগের কথা তিনি অস্বীকার করেন। সামান্য পরিমান জায়গা ভেঙ্গে পড়েছে তা পুনরায় নির্মাণ করে দিবেন বলে প্রতিবেদককে জানান।
ড্রেন নির্মাণ কাজের ঠিকাদার মোঃ রাকিব হাসান খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এলজএসপির কাজটি মৃলত ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ইউপি সদস্যরা মিলে করে থাকেন । এ কাজে শুধু আমাদের লাইসেন্সটি ব্যবহার করা হয়। লাইসেন্স ব্যবহারের প্রক্রিয়াটি বৈধ কিনা এমন প্রশ্নে তিনি জানান, বিষয়টি আসলেই বৈধ নয়। এতে যে কোনো দূর্ঘটনা ঘটলে আমাদেরকেই দায়ী করা হয়। তবে স্থানীয় পরিচিতির জন্য না করতে পারি না।
এ বিষয়ে কাস্তুল ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সাইফুল হক রন্টি জানান, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি। ইউপি সদস্য শেখ জমির উদ্দিন নির্মাণ কাজটি করেন। ড্রেনটি ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। ড্রেনটি দ্রুত পুনঃ নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম সামদানীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ভেঙ্গে পড়া অংশ পুনরায় নির্মাণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। কাজ শেষ না করে সম্পূর্ণ বিল উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন বিল মূলত জেলা অফিস থেকে দেয়া হয়। তবে খোঁজ নিয়ে দেখেছি বিল সম্পূর্ণ উত্তোলন করা হয় নি।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল আলম জানান, এ বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন এলাকাবাসী আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করানো হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কাজের বিল পরিশোধ করা হবে না। প্রয়োজনে পুনরায় ড্রেনটি নির্মাণ করা হবে।