কিশোরগঞ্জে কোরআনে শপথ করিয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগ

Date:

ভিশন ডেস্ক: কিশোরগঞ্জের কোরআনে শপথ করিয়ে এক ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে। কুলিয়ারচরে পৌর এলাকার বড়খারচর আদর্শ নূরানী ও হাফিজয়া মাদ্রাসা শিক্ষক হাফেজ মাওলানা ইয়াকুব আলী (৩৫) এর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় কুলিয়ারচর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক হাফেজ মাওলানা ইয়াকুব আলী উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নের উছমানপুর গ্রামের সাবেক সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল কাদিরের ছেলে। শিক্ষক ইয়াকুব বলাৎকারের বিষয়ে কাউকে কিছু না বলার জন্য ওই ছাত্রকে কোরআন শরীফ ধরিয়ে শপথনামা পাঠ করান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ছাত্রের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তাদের ছোট ছেলে (১১) গত ২ এপ্রিল মাদ্রাসা থেকে বাড়ি আসার পর আর মাদ্রাসায় যেতে না চাইলে তাকে একাধিকবার মারধর করেন তারা। তারপরও সে মাদ্রাসায় যেতে অস্বীকৃতি জানায়।

একপর্যায়ে পরিবারের চাপে ওই ছাত্র গত বুধবার (৬ এপ্রিল) সকালে মাদ্রাসায় যাওয়ার নাম করে মাকে নিয়ে সোজা কুলিয়ারচর থানার গেইটে নিয়ে যায়। তখনও মা বুঝতে পারেনি কি হয়েছে।

মা তখন সন্দেহ করেন যে, ছেলেকে মারধর করেছে এজন্য অভিযোগ করতে হয়তো থানায় নিয়ে এসেছে। ছেলে পুলিশের কাছে মারধরের অভিযোগ করবে এমন ভয় থেকে মা ছেলেকে থানার সামনে থেকে বুঝিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

তারপর ওই ছাত্র তার মা’কে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির নিকট নিয়ে যেতে বলে।

মা তখন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সাত্তার মাস্টারের নিকট নিয়ে গেলে, কমিটির সভাপতির কাছে ছেলেটি তার সাথে হওয়া নির্মমতার (বলাৎকার) ঘটনা খুলে বলে এবং অভিযোগ করার জন্য তাকে থানায় নিয়ে যেতে বলেন মাদ্রাসার সভাপতিকেও। শিশু ছেলের এমন কথা শুনে ‘থ’ হয়ে যান মাদ্রাসার সভাপতি।

বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে স্থানীয় একটি মহল বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায়।

বিষয়টি স্থানীয় গণামাধ্যমকর্মীদের কানে পৌঁছায়। ফেসবুকেও বিষয়টি নিয়ে পোস্ট হলে বিভিন্ন মহল থেকে ঘটনার তদন্ত ও বিচারের দাবি উঠে।

এদিকে নির্যাতিত ছাত্রের বড় ভাই এই ঘটনার বিচারেব দাবিতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি’র নিকট বিচার চেয়ে পৃথক পৃথক ভাবে অভিযোগ করেন।

নির্মম নির্যাতনের শিকার মাদ্রাসার ছাত্র সাংবাদিকদের জানায়, মাদ্রাসার ইয়াকুব আলী হুজুর তাকে গত ৩১ মার্চ দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে খারাপ কাজ করেছে। খারাপ কাজ করার পর কোরআন শরীফে ধরিয়ে তাকে কসম কাটায় এ ঘটনার কথা কাউকে না বলার জন্য।

এর আগেও তাকে ওই হুজুর খারাপ কাজ করে। তখন ভয়ে কাউকে কিছুই বলতে সে সাহস পায়নি।

এরপর বুধবার (৭ এপ্রিল) রাত ১০টা ৫মিনিটের সময় নির্যাতনের শিকার ছাত্রের বাবা বাদী হয়ে অভিযুক্ত ওই মাদ্রাসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে কুলিয়ারচর থানায় একটি মামলা (নং-৪) রুজু করেন।

মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক শিশু ছাত্র বলাৎকারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইয়াছির মিয়া।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত হাফেজ মাওলানা ইয়াকুব আলী’র সাথে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ.কে.এম সুলতান মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মাদ্রাসা ছাত্র বলাৎকারের ঘটনায় হাফেজ মাওলানা ইয়াকুব আলী’র বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টায় তৎপর রয়েছে পুলিশ। সূত্র: কিশোরগঞ্জ নিউজ।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে ফের বন্দুক হামলা, নিহত ৪

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার একটি হাইস্কুলে আবারও বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত চারজন...

শেখ হাসিনাকে ভারতে চুপ থাকতে হবে: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একহাত নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা...

ইসলামী ব্যাংকের ঋণের অর্ধেকের বেশি টাকা নিয়েছে এস আলম

দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণের...

বেক্সিমকো গ্রুপের সম্পদ দেখভালে রিসিভার নিয়োগের নির্দেশ হাইকোর্টের

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান...