মুহাম্মদ কাইসার হামিদ : নির্বাচনি তফসিল অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভা নির্বাচন।
এ নির্বাচনকে ঘিরে প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর থেকে কুলিয়ারচর পৌর এলাকায় বইছে নির্বাচনী হাওয়া। প্রার্থীদের প্রতীক সম্বলিত নির্ধারিত কালার এবং মাপের পোষ্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে হাট-বাজার ও পাড়া-মহল্লা। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে কাক ডাকা ভোর হতে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যাপক গণসংযোগ করে কুশল বিনিময় করে ভোট ও দোয়া চেয়ে বেড়াচ্ছেন ভোটারসহ ছোট বড় সকল শ্রেণীপেশার মানুষের নিকট। বসে নেই প্রার্থীদের আত্মীয় স্বজন ও কর্মী সমর্থকরাও।
মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর পাশাপাশি সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই গণসংযোগে। তারাও দিনরাত গণসংযোগ করে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে বিভিন্ন ভাবে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছে।
সোমবার (১১ জানুয়ারী) সরেজমিনে পৌর এলাকার ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, অত্র ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী মোছা. রহিমা আক্তার (নিপা) কর্মী সমর্থক ও আত্মীয় স্বজন নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বড়খারচর থেকে কুলিয়ারচর বাজার এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করে তার নির্বাচনী প্রতীক চশমা মার্কায় ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন ।
গণসংযোগকালে সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী রহিমা’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গত নির্বাচনে তিনি কিছু ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। ওই নির্বাচনের বিজয়ী প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি, তাই আল্লাহর উপর ভারসা রেখে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে ভোটারগন তাকে নিরাশ করবেন না ইনশাল্লাহ। তিনি ছোট বড় সকল শ্রেণীপেশার মানুষের দোয়া ও সহযোগীতা কামনা করে ভোটারদের নিকট ভোট দাবী করে আরো বলেন, এবারের নির্বাচনে চশমা প্রতীকে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হলে নারী উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা রাখবেন। অসহায়, নির্যাতিত ও অবহেলিত নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করে যাবেন। এলাকার উন্নয়নেও রাখবেন ব্যাপক ভূমিকা।
অপরদিকে ১নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী মো. মজনু মিয়া কর্মী সমর্থক নিয়ে তার নির্বাচনী প্রতীক উটপাখি মার্কার ভোট চেয়ে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করতে দেখা যায়।
এছাড়া ২নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী মো. অলি উল্লাহ কর্মী সমর্থকদের সাথে নিয়ে নিয়ে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করে তার নির্বাচনী প্রতীক পানির বোতল মার্কায় ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন।
এ সময় তিনি বলেন, গত নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোট পেয়ে কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়ে প্যানেল মেয়র-১ হিসেবে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এবারও যদি তিনি কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হতে পারেন তাহলে নির্বাচিত মেয়রের সাথে সমন্বয় করে সৎ এবং নিষ্ঠার সহিত এলাকার অসমাপ্ত কাজ গুলো শেষ করার চেষ্টা করবেন।
এছাড়াও ৩নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী দিলীপ দাস তার নির্বাচনী প্রতীক ডালিম মার্কায় ভোট চাইতেও দেখা যায়।
জানা যায়, এবারের নির্বাচনে ৫৫ জন প্রার্থীর মধ্যে মেয়র পদে ২ জন, সংরক্ষিত আসনে মহিলা কাউন্সিলর পদে ১২ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন । এদের মধ্যে মেয়র পদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত সৈয়দ হাসান সারওয়ার মহসিন (নৌকা) ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মনোনীত নূরুল মিল্লাত (ধানের শীষ) প্রতীক পেয়েছেন।
সংরক্ষিত আসনে মহিলা কাউন্সিলর পদে ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ড থেকে কৃষ্ণা রানী দাস (জবা ফুল), ফারজানা আক্তার (আনারস), রহিমা (চশমা) ও সুমা আক্তার (টেলিফোন)। ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড থেকে ইয়াছমিন (আনারস), সুরাইয়া আক্তার (চশমা) ও মোছা.আছমা আক্তার (টেলিফোন)। ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড থেকে মোছা. ইভা বেগম (চশমা), রীনা রানী সুত্রধর (জবা ফুল), আয়শা (আনারস), মোসা. নাজমা বেগম (অটোরিকশা) ও মোছা. শামীমা আক্তার (টেলিফোন) প্রতীক পেয়েছেন।
সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১নং ওয়ার্ড থেকে মো. হাবিবুর রহমান (গাজর), মো. মজনু মিয়া (উঠ পাখি), মো. সোহেল রানা (পানির বোতল) ও মো. অহিদ মিয়া (পাঞ্জাবি)। ২নং ওয়ার্ড থেকে মো, অলি উল্লাহ্ (পানির বোতল) ও মো. হুমায়ুন কবির (উঠপাখি)। ৩ নং ওয়ার্ড থেকে দিলীপ দাস (ডালিম), নন্দলাল দাস (উঠ পাখি), মনোরঞ্জন দাস (পানির বোতল), নবকুমার দাস (পাঞ্জাবি) ও শ্রীকৃষ্ণ দাস (গাজর)। ৪নং ওয়ার্ড থেকে মো. আরমান মিয়া (উঠপাখি), মো. সেলিম মিয়া (পানির বোতল) ও পারভেজ মিয়া (পাঞ্জাবি)। ৫নং ওয়ার্ড থেকে মো. আতিকুর রহমান ‘পরশ’ (পাঞ্জাবি), মো. দেলোয়ার হোসেন (ডালিম), মো. শাহজাহান (পানির বোতল), সাইফুল ইসলাম (উঠ পাখি), মো. ফরহাদ হোসেন (টেবিল ল্যাম্প) ও মো. শিশু মিয়া (ব্রিজ)। ৬নং ওয়ার্ড থেকে মো. মেরাজ খন্দকার (ডালিম), মো. মুখলেছুর রহমান ভূঁইয়া (টেবিল ল্যাম্প), মো. হেলাল উদ্দিন ভূঞা (উঠ পাখি), ইলিয়াছ মিয়া (পানির বোতল), নূর আলম মিয়া (পাঞ্জাবি) ও মো. মন্টু মিয়া (ব্রিজ)। ৭নং ওয়ার্ড থেকে কাজী রফিকুল ইসলাম (টেবিল ল্যাম্প), মো. জুয়েল মিয়া (উঠ পাখি), জামাল উদ্দিন (পাঞ্জাবি) ও মো. হারিছ উদ্দিন (পানির বোতল)। ৮নং থেকে মো. হাফিজুর রহমান (উঠপাখি), লুৎফর রহমান (গাজর), মো. নুরুল ইসলাম ভূঞা (পাঞ্জাবি), অহিদ ভুইয়া (পানির বোতল), মো. শহিদুল ইসলাম (টেবিল ল্যাম্প) ও মো. জজ মিয়া (ব্রিজ) এবং ৯নং থেকে সৈয়দ কানন (পানির বোতল), সৈয়দ সাইফুর রহমান (পাঞ্জাবি), মো. সোয়েব মিয়া ‘রোমান’ (উঠপাখি), সৈয়দ এরশাদ উজ্জামান (টেবিল ল্যাম্প) ও মো. উমেদ আলী (ডালিম) প্রতীক পেয়েছেন।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, এ পৌরসভায় মোট ভোটার ২৫ হাজার ১৪৩ জন। এতে পুরুষ ভোটার ১২ হাজার ৬ শ জন ও মহিলা ভোটার ১২ হাজার ৫৪৩ জন। এই প্রথম এ পৌরসভায় ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোটারগণ তাদের ভোট প্রয়োগ করবেন।