সরকার ভাসানচর নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থার মনোভাব বদলাতে চায়

Date:

ভীষন ডেস্ক: রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, দাতা গোষ্ঠী ও কূটনীতিকদের নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। তাদের সেই নেতিবাচক মনোভাব বদলাতে চায় সরকার।

এই লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের ভাসানচর স্থানান্তর নিয়ে শুরু থেকেই বিদেশিদের সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েন চলছে। বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে না পাঠানোর পক্ষে। তারপরও শেষ পর্যন্ত কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে সরকার।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিদেশি দাতাগোষ্ঠীর ধারণা ছিল, বর্ষা, বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় ভাসানচর এলাকা ডুবে যেতে পারে। সে কারণে দ্বীপটি বসবাসের অনুপযোগী বলে তাদের ধারণা। একই সঙ্গে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জোর করে পাঠানো হচ্ছে বলেও দাবি করে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। বিশেষ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়েছে, ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আম্পানে দ্বীপটির কোনো ক্ষতি হয়নি। দ্বীপটি ৩০ বছরের পুরোনো। সেখানে আগে থেকেই মানুষজন ছিল। দ্বীপটি পুরোপুরি নিরাপদ। স্থানান্তরিত রোহিঙ্গারাও নিরাপদে থাকবেন। এছাড়া কোনো রোহিঙ্গাকে জোর করে সেখানে পাঠানো হচ্ছে না।

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে জাতিসংঘের দাবি, তাদের এই প্রক্রিয়ায় মধ্যে রাখা হয়নি এবং সবকিছু তাদের অবহিত করা হয়নি। তবে জাতিসংঘের এই দাবি পুরোপুরি নাকচ করে দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শুরু থেকেই জাতিসংঘকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। এখন জাতিসংঘ জানিয়েছে, ভাসানচর নিয়ে কারিগরি কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাওয়ার পর তারা এ নিয়ে মতামত জানাবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও জাতিসংঘের সুরে সুর মিলিয়ে জানিয়েছে, তারাও জাতিসংঘের কারিগরি কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ নিয়ে মতামত জানাবে।

রোহিঙ্গাদের ভাসানচর পাঠানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ভাসানচরে স্থানান্তর যেন স্বেচ্ছায় হয়, এমনটাই প্রত্যাশা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া জাতিসংঘের কারিগরি কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদনকে আমলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

সূত্র জানায়, ভাসানচর এলাকা প্রাকৃতিক ঝুঁকিমুক্ত, একইসঙ্গে সেখানে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা যে নিশ্চিত করা হয়েছে, বিদেশিদের সেটাই দেখাতে চাচ্ছে সরকার। সে কারণে ঢাকার বিদেশি কূটনীতিকদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানান, বিদেশি কূটনীতিকদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। দ্বীপটি একেবারেই নিরাপদ। আমরা তাদের দ্বীপটি দেখাতে চাই।

তিনি আরও জানান, সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত ওমানের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে এক বৈঠকে ভাসানচর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ভাসানচর স্থানান্তরের সিদ্ধান্তকে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের মধ্যে কাজ করতে দেশি বিদেশি গোষ্ঠী আগ্রহী হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে ২২টি এনজিও ভাসানচরে কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়া ইতোমধ্যেই সিঙ্গাপুর ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে সাময়িকভাবে। তাদের চূড়ান্তভাবে মিয়ানমারেই ফিরে যেতে হবে। আর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘিঞ্জি পরিবেশ থেকে রক্ষার জন্য তাদের ভাসানচরে নেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, দুই দফায় ৩ হাজার ৪৪৬ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত ৪ ডিসেম্বর ১৬৪২ আর ২৯ ডিসেম্বর ১৮০৪ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানো হয়। সেখানে পর্যায়ক্রমে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে পাঠানো হবে। সূত্র: বাংলা নিউজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে ফের বন্দুক হামলা, নিহত ৪

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার একটি হাইস্কুলে আবারও বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত চারজন...

শেখ হাসিনাকে ভারতে চুপ থাকতে হবে: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একহাত নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা...

ইসলামী ব্যাংকের ঋণের অর্ধেকের বেশি টাকা নিয়েছে এস আলম

দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণের...

বেক্সিমকো গ্রুপের সম্পদ দেখভালে রিসিভার নিয়োগের নির্দেশ হাইকোর্টের

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান...