ভিশন ডেস্ক: আকারে আয়তনে বোয়িং-৭৪৭ বিমানের মতো। ভরও বেশি। এমনই একটি অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণু তেড়ে আসছে পৃথিবীরই দিকে। আগামীকাল, আজ পৃথিবীর কক্ষপথ ঘেঁষে বেরিয়ে যাওয়ার কথা এই গ্রহাণুর।
পৃথিবীর মুখোমুখি হয়ে সংঘাত লাগবে কিনা সেটা এখনও ঠিক মতো জানা যাচ্ছে না। তবে ঘাত-প্রতিঘাতের আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা।
গ্রহাণুদের আসার বিরাম নেই। গত এক মাস ধরে দফায় দফায় গ্রহাণুরা পৃথিবীর আশপাশে ঘুরে গেছে। কেউ একেবারে কোল ঘেঁষে আবার কেউ একটু তফাৎ রেখে দূর দিয়ে। শেষ যে গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে এসেছিল সে ১৩ হাজার মাইল উপর দিয়ে উড়ে গেছে। এরপরেই এই নতুন গ্রহাণু আগমনের কথা শুনিয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।
মহাকাশে ভিন গ্রহদের দেখতে ওঁৎ পেতে রয়েছে নাসার টেলিস্কোপ। সেখানেই ধরা দিয়েছে এই গ্রহাণু। নাম ২০২০ আরকে২। আমেরিকান স্পেস সেন্টারের নিয়ার আর্থ অবজেক্ট মিশনে এই গ্রহাণুর হাল হকিকত খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে।
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, গত মাসেই এই গ্রহাণুকে মহাকাশে ঘুরঘুর করতে দেখা গিয়েছিল। ৭ অক্টোবর অর্থাৎ আগামীকাল পৃথিবীর কাছে চলে আসবে ২০২০ আরকে ২। তবে কয়েকজন মনে করছেন পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে ২৩ লাখ মাইল দূর দিয়ে উড়ে যেতে পারে এই গ্রহাণু। যদি তেমনটা হয়, তাহলে সংঘাতের সম্ভাবনা তেমন নেই। কিন্তু যদি গতিপথ বদলে পৃথিবীর একেবারে কাছে এসে পড়ে তাহলে টক্করের শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।
২০২০ আরকে২ অ্যাস্টেরয়েডের পরিধি ১১৮ থেকে ২৬৫ ফুট। নাসা বলেছে, ৬.৬৮ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড গতিবেগে সে ছুটে আসছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বেশিরভাগ গ্রহাণু মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝের কক্ষপথে ঘুরে বেড়ায়। সেখান থেকেই এর আগমন হয়েছে কিনা সেটা এখনও জানা যায়নি। এই গ্রহাণুর বয়স নিয়েও চর্চা চলছে বিজ্ঞানী মহলে।
পৃথিবীর উপর দিয়ে কিছুদিন আগেই উড়ে গেছে ছোটখাটো গাড়ির আকারের একটি গ্রহাণু। নাম ২০২০ কিউজি (২০২০ ছএ)। দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের উপর দিয়ে একেবারে কাছ ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছিল ওই গ্রহাণু।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে হালকা সংঘাতের পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল তবে নাসা জানিয়েছে, পৃথিবীর সঙ্গে ঘাতপ্রতিঘাতের পথে না গিয়ে সে শুধু মুখ দেখিয়ে চলে গেছে। এই গ্রহাণু বা অ্যাস্টেরয়েডের প্রথম খোঁজ দিয়েছিল বম্বের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (আইআইটি)দুই পড়ুয়া কুণাল দেবনাথ ও কৃতী শর্মা।
নাসা জানিয়েছে, আরও একটি গ্রহাণুর পৃথিবীর সঙ্গে সংঘাত হতে পারে নভেম্বরে। তীব্র বেগে সেটি ধেয়ে আসছে পৃথিবীরই দিকে। ৩ নভেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগের দিনই পৃথিবীর সঙ্গে টক্কর হতে পারে এই গ্রহাণুর। নাসার নিয়ার আর্থ অবজেক্ট মিশনে বলা হয়েছে, এই গ্রহাণুর নাম ২০১৮ভিপি১ (২০১৮ঠচ১)। তবে এর আকার এতই ছোট যে বায়ুর কণার সঙ্গে সংঘর্ষ হলেও তেমন ক্ষতি কিছু হবে না। মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই গ্রহাণুর পরিধি ০.০০২ কিলোমিটার (প্রায় ৬.৫ ফুট)।
জুলাই মাসেই ১০৮ ফুট পরিধির ২০২০ কেকে৭ গ্রহাণুটি পৃথিবীর একেবারে কাছ ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে। ১১৫ ফুট পরিধির ২০২০ কেডি৪ গ্রহাণুও পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসে। তবে তাদের সঙ্গে পৃথিবীর সংঘাত হয়নি। ‘অ্যাস্টেরয়েড ২০২০ এনডি’ নামক গ্রহাণুও পৃথিবীকে তার মুখ দেখিয়ে গিয়েছে।
নাসা জানিয়েছিল, এই গ্রহাণু নাকি আকারে ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যশালী ‘লন্ডন আই’-এর থেকেও বিরাট। এর গতি ছিল ঘণ্টায় ৪৮ হাজার কিলোমিটার। ১৭০ মিটার লম্বা এই গ্রহাণুর থেকে পৃথিবীর দূরত্ব ছিল ০.০৩৪ অ্যান্ট্রনমিকাল ইউনিট অর্থাৎ প্রায় ৫০ লাখ ৮৬ হাজার ৩২৮ কিলোমিটার। সূত্র-জি নিউজ, দ্যা ওয়াল