ভ্রমণ ডেস্কঃ সারা বিশ্ব কোভিড-১৯ আতঙ্কে আতঙ্কিত। দীর্ঘদিন লকডাউনে থেকে অনেকেই হাপিয়ে উঠেছেন। দূর কোনো জায়গা থেকে ঘুরে হয়তো মনটা ভালো হয়ে যেতো ভাবছেন। কিন্তু কোথায় যাবেন তা নয়ে চিন্তিত!
দূরে কোথাও নয় বাংলাদেশেই আপনার খুব কাছের সুন্দর একটি জায়গা মাধবকুন্ড জলপ্রপাত। অল্প সময়ে, স্বল্প খরছে মন ভালো করার জন্য নিঃসন্দেহে সুন্দর একটি স্থান সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার মাধবকুন্ড।
মাধবকুন্ডে অবস্থিত জলপ্রপাতটি বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু ও শীতল জলপ্রপাত বলে খ্যাত। এর উচ্চতা প্রায় ১৮০ ফুট। এই জলপ্রপাতের মূল ঝর্ণাধারা দিয়ে সারা বছরই পানি প্রবাহিত হয়। বর্ষায় তীব্র তোড়ে পানি প্রবাহ বেড়ে জলপ্রপাতটির সৌন্দর্য দ্বিগুন হয়ে যায়। অবিবারাম পানি প্রবাহের ফলে জলপ্রপাতের নিচের অংশে গভীর খাদ বা কুন্ডের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঝর্ণার পানি গিয়ে মিলিত হয়েছে সিলেটের হাকালুকি হাওরে।
মাধবকুন্ড ঝর্ণার কিছু দূরেই আরেকটি ঝর্ণা। তার নাম পরীকুন্ড ঝর্ণা। জনশ্রুতি আছে বহু বছর আগে রাতে পরীকুন্ড ঝর্ণায় প্রায়ই পরীরা স্নান রতো। সে থেকেই এর নাম পরীকুন্ড ঝর্ণা।
পরীকুন্ডের পাশেই টিলাতে অবস্থিত প্রাচীন মহাদেবের মন্দির। মহাদেবের আরেক নাম মাধব। তারই নামানুসারে তার আবির্ভাবের এই স্থানটি কালক্রমে মাধবকুন্ড নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
মাধবকুন্ডের পাশেই উচু নিচু টিলায় অবস্থিত চা বাগান আপনাদের ক্লান্ত মনে অন্য রকম প্রশান্তি দিবে। মাধবকুন্ড ভ্রমণ নিঃসন্দেহে এই চলমান পরিস্থিতিতে পরিবার পরিজন নিয়ে আপনার ভ্রমণ পিপাসু মনের অন্যরকম স্থান।
আশে পাশের কিছু দর্শনীয় স্থানঃ
পাহাড়, চা বাগান ও খাসিয়াপুঞ্জি: মাধবকুন্ড যাবার বোনাস হিসাবে আপনি বেশ কিছু জিনিস এমনিতেই দেখতে পারবেন। তার মধ্যে পাহাড়, চা-বাগান, খাসিয়াপুজ্ঞি অন্যতম। এসব জায়গায় আপনি অনায়াসে বেড়াতে পারবেন। তবে এই সব জায়গায় বেড়াতে গেলে আপনি ভাল তো জগৎ ভার এই নীতিটা আপনাকে মেনে চলতে হবে। যদি আপনি নিজ থেকে কোন সমস্য তৈরী না করেন তবে কোন সমস্যায় পতিত হবার চান্স নাই বললেই চলে।
হাকালুকিঃ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকির বেশির ভাগ অংশের অবস্থান বড়লেখা উপজেলায়। আর তাই মাধবকুন্ড দেখার পাশাপাশি বিকাল বেলা হাকালুকি সৌন্দয্য উপভোগ করতে পারেন। হাকালুকি যাবার জন্য আপনাকে স্থানীয় সি. এন.জি রিজার্ভ করে নিতে হবে। কাঠালতলী থেকে হাকালুকি যেতে সময় লাগবে ১ থেকে ১.৩০ ঘন্টার মতো।
আগর-আতরঃ সূদুর মধ্যপাচ্যের আগর-আতরের অন্যতম যোগানদাতা বাংলাদেশের আগর-আতরের রাজধানী খ্যাত বড়লেখার সুজানগর গ্রামটিও ঘুরে দেখতে পারেন যদি আপনার হাতে পযার্প্ত সময় থাকে। কাঠালতলী থেকে সুজানগর যেতে আপনাকে সি. এন.জি নিয়েই যেতে হবে।
বেকির লেক: প্রাকৃতিক সৌন্দয্যে ভরপুর বড়লেখার উপজেলার দক্ষিন ভাগের বেকির লেকটিও হতে পারে আপনার ভ্রমনে পরবর্তী স্থান। সৌন্দয্যের ক্ষেত্রে কোন ভাবেই এটা শ্রীমঙ্গলের মাধবপুর লেকের চাইতে কম নয়। যেতে চাইলে সি. এন.জি নিয়েই যেতে হবে সেখানে ।
কোথায় থাকবেনঃ এখানে জেলা পরিষদের ২টি বাংলো ও ২টি আবাসিক হোটেল রয়েছে।
তাছাড়া আপনি চাইলে সিলেট কিংবা মৌলভীবাজার শহরের হোটেলেও থাকতে পারেন। সিলেটে থাকার মত অনেকগুলো হোটেল আছে,সিলেটে আপনি আপনার প্রোয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী যে কোন ধরনের হোটেল পাবেন। কয়েকটি পরিচিত হোটেল হল – হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি। লালা বাজার এলাকায় কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ হোটেল অনুরাগ – এ সিঙ্গেল রুম ৪০০টাকা (দুই জন আরামসে থাকতে পারবেন), তিন বেডের রুম ৫০০টাকা(নরমালই ৪জন থাকতে পারবেন)। রাত যাপনের জন্য দরগা রোডে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। রুম ভাড়া ৫০০/- টাকা থেকে ৫০০০/- টাকা পর্যন্ত।
শহরের শাহজালাল উপশহরে হোটেল রোজ ভিউ (০৮২১-৭২১৪৩৯)।
দরগা গেইটে হোটেল স্টার প্যাসিফিক (০৮২১-৭২৭৯৪৫)।
ভিআইপি রোডে হোটেল হিলটাউন (০৮২১-৭১৬০৭৭)।
বন্দরবাজারে হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল (০৮২১-৭২১১৪৩)।
নাইওরপুলে হোটেল ফরচুন গার্ডেন (০৮২১-৭১৫৫৯০)।
জেল সড়কে হোটেল ডালাস (০৮২১-৭২০৯৪৫)।
লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন (০৮২১-৮১৪৫০৭)।
আম্বরখানায় হোটেল পলাশ (০৮২১-৭১৮৩০৯)।
দরগা এলাকায় হোটেল দরগাগেইট (০৮২১-৭১৭০৬৬)।
হোটেল উর্মি (০৮২১-৭১৪৫৬৩)।
জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট (০৮২১-৭১৪৮৫০)।
তালতলায় গুলশান সেন্টার (০৮২১-৭১০০১৮) ইত্যাদি।
যেভাবে যাবেন মাধবকুন্ডঃ আপনারা যারা ঢাকা হয়েে আসবেন সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা-বিয়ানীবাজার রুটের অনেক ভালো মানের চেয়ারকোচ এসি, নন এসি বাসে করে আসতে পারেন। এসব বাস সার্ভিসের মাঝে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস, শ্যামলী, এনা, ইউনিক পরিবহন অন্যতম। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা।
বাসে এলে আপনাকে সরাসরি বড়লেখা বাজারের একটু আগে কাঁঠালতলা নামতে হবে। সেখানে থেকে সিএনজি অথবা ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা করে আসতে হবে মাধবকুন্ড ইকো পার্কের সামনে। সেক্ষেত্রে জনপ্রতি ভাগা পড়বে ২০ থেকে ৩০ টাকা। চাইলে পুরো সিএনজি রিজার্ভ করতে পারেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকার ভিতরে। অবশ্যই দরদাম করে সিএনজি নিবেন।
যারা বাস ভ্রমণে অভ্যস্থ বা স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না আপনারা চাইলে কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেন ধরেও আসতে পারেন। জয়ন্তিকা, উপবন, পারাবত ট্রেনে করে আসতে হবে কুলাউড়া স্টেশনে। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। কুলাউড়া স্টেশন থেকে মাধবকুন্ড ইকো পার্কের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। তার জন্য আপনাকে সিএনজি নিয়ে আসতে হবে মাধবকুন্ড। ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। অবশ্যই দরদাম করে নিবেন।
তা ছাড়া আপনি চাইলে কমলাপুর থেকে ট্রেনেও আসতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে ঢাকা-সিলেটের আন্তনগর ট্রেনে উঠতে হবে এবং কুলাউড়া নামক স্টেশনে নামতে হবে। ট্রেনগুলোর মধ্যে আছে জয়ন্তিকা, পারাবত, উপবন। উপবন এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে রাত ১০টায় ছাড়ে আর কুলাউড়ায় এসে পৌঁছায় ভোর ৫টায়। ভাড়া নেবে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা। কুলাউড়া থেকে মাধবকুণ্ডের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার, আপনি এখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে সরাসরি মাধবকুণ্ডে যেতে পারেন। ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতির সম্মুখীন হলেঃ আপনার পুরো মৌলভীবাজার জেলা ভ্রমণে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করুন। আপনাদের সুবিধার্থে নিকটস্থ থানার ফোন নম্বরঃ
১। ওসি মৌলভীবাজার- ০১৭১৩৩৭৪৪৩৯
২। ওসি শ্রীমঙ্গল- ০১৭১৩৩৭৪৪৪০
৩। ওসি কমলগঞ্জ- ০১৭১৩৩৭৪৪৪১
৪। ওসি রাজনগর- ০১৭১৩৩৭৪৪৪২
৫। ওসি কুলাউড়া- ০১৭১৩৩৭৪৪৪৩
৬। ওসি বড়লেখা- ০১৭১৩৩৭৪৪৪৪
৭। ওসি জুরি- ০১৭১৩৩৭৪৪৪৫
অবশ্যই স্বাস্থ্য বিধি মেনে, নিজেকে নিরাপদ রেখে নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করুন।